দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব পররাষ্ট্রনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন। তাঁর নতুন কূটনৈতিক নীতিগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থানকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ এবং কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স-এর সভাপতি এমেরিটাস রিচার্ড হাস সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে এই পরিবর্তন সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি অবস্থান গ্রহণ করছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিশেষ অধিকার রাখে। এরই অংশ হিসেবে ইউক্রেন সংকট নিরসনে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে, তবে এতে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। একইভাবে, ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের মাধ্যমে ওই অঞ্চলকে নতুন রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে রূপান্তর করার কথা বলেছেন।
বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বিগত ৮০ বছর ধরে শক্তিশালী ছিল এবং এটি বিশ্বকে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে। যদিও এই ব্যবস্থা নিখুঁত নয়, এটি বিশ্বব্যাপী সমৃদ্ধি, উন্নত জীবনযাত্রা এবং গণতন্ত্রের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান পদক্ষেপগুলো এই কাঠামো দুর্বল করে দিতে পারে।
হাস আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ট্রাম্প প্রশাসন ঐতিহ্যগত মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল করছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই মেক্সিকো ও কানাডার ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে কট্টর-ডানপন্থী দলগুলোকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য কঠোর সমালোচনা করেছেন। এই ধরনের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত মার্কিন মিত্রদের আস্থা নষ্ট করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের দূরে সরিয়ে দেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রভাব হ্রাস পাবে। মিত্র দেশগুলো তাদের কূটনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি কিছু দেশ স্বাধীনভাবে পরমাণু অস্ত্র অর্জনের পথেও যেতে পারে। এভাবে, বিশ্ব এক নতুন বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য কমে যাবে।
বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি কীভাবে বিশ্বকে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে মিত্র দেশগুলো সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।