বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কানসাস থেকে উড়ে আসা একটি স্থানীয় যাত্রীবাহী বিমানের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে দূর্ঘটনার শিকার যাত্রীবাহী বিমানটি রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছে অবস্থিত পটোমাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়। এতে বহু সংখ্যক যাত্রী নিহতের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল সূত্র।
তবে ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন সে বিষয়ে কিছু জানায়নি সূত্রটি। এদিকে ইউএস সিনেটর রজার মার্শাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বিমানে থাকা সকলেই নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ঘটনাটি শুনে আমি সত্যই ভারাক্রান্ত। সম্ভবত ৬০ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘’যখন একজন মারা গিয়ে থাকে সেটি হয় ট্র্যাজেডি কিন্তু যখন সকলের নিহত হবার ঘটনা ঘটে তখন সেটি অসহনীয় একটি সংবাদ হয়ে দাঁড়ায়। এমন খবর হৃদয়কে ভেঙে চুরমার করে দেয়। ‘’
এদিকে এ দূর্ঘটনার বিষয়ে একই সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটোন এয়ারলাইন্সের সিইও কাম প্রেসিডেন্ট জ্যাক পটার বিমানটি বিধ্বস্তের সময় প্রথম প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানান যে তখনও বিমানটিকে উদ্ধার করার মতো পরিস্থিতি ছিল।
সিবিসি জানিয়েছে এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খব জানা গেছে। পরে এসব মৃতদেহ পুলিশের সাহায্যে উদ্ধার করা হয়। দুজন রয়টার্সকে জানান, এ সময় বহু সংখ্যক মৃতদেহ পানির নিচ থেকে তুলে আনার দৃশ্য দেখা যায়।
আমেরিকানএয়ারলাইন্স অবশ্য ৬৪ জনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একইসঙ্গে বিমানে থাকা ৪ জন কেবিন ক্রুও এ ঘটনায় মারা যান বলে জানায় সংস্থাটি। দূর্ঘটনার সময় সামরিক হেলিকপ্টারে ৩ জন সেনা সদস্য ছিলেন বলেও মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
জানা যায়, কানসাস থেকে উড়ে আসা বিমানটি রিগ্যান বিমানবন্দরে অবতরণের প্রতুতি নেয়ার সময় মধ্য আকাশে সংঘর্ষের কবলে পড়ে। এটিসি টাওয়ার ও ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের রেডিও কমিউনিকেশন থেকে জানা যায়, ঘটনার সময়ে হেলিকপ্টারে থাকা সদস্যগণ দূর্ঘটনার বিষয়ে সতর্কাবস্থানে ছিলেন।
এদিকে দূর্ঘটনার বিষয়ে সময় ক্ষেপণ না করে তদন্তের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। তবে দূর্ঘটনার জন্য হেলিকপ্টার ও এটিসি (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) কে দায়ী করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল এ লিখেছেন।
ট্রাম্প লিখেন, ‘’হেলিকপ্টারটি আকাশে সোজা বিমানের দিকেই ধেয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রাতের আকাশ মেঘমুক্ত স্পষ্ট ছিল এমনকি বিমানের বাতিগুলো পর্যন্ত জ্বলজ্বল করছিল। তাহলে কেন হেলিকপ্টার উপরে নয়তো নিচের দিকে নেমে আসেনি।‘’
এটিসি’র বিষয়েও তিনি লিখেন, কন্ট্রোল টাওয়ার থেকেই বা কেন বিমানটি দৃশ্যমান হবার পর হেলিকপ্টারে থাকা চালকের করণীয় কি সে বিষয়ে বলা হয়নি।
তিনি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে লিখেন, এমনটা ভালো হয়নি। এমন ঘটনা অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।
এদিকে এটিসি’র ধারণকৃত রেকর্ডিং থেকে হেলিকপ্টাররের সাথে অবশ্য শেষ মুহুর্তে যোগাযোগের জন্য ‘কল সাইন PAT25’ পাঠানো হয় ঠিক বিমানটির সঙ্গে সংঘর্ষের সময়। এমটাই দাবি করেছে সিআরজে।
রেকর্ড দেখা যায় স্থানীয় সময় ৮.৪৭ মিনিটে এটিসি’র এক কর্মকর্তা বলছিলেন,‘ PAT25, আপনি কি সিআরজে’র দেখা পেয়েছেন?’
আর কয়েক সেকেন্ড বাদেই আরেকটি বিমান এটিসিকে বলতে শোনা যায় যে টাওয়ার থেকে এমন কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা? পরে এটিসি থেকে বিমানটিকে দিক পরিবর্তন করে রানওয়ে ৩৩ এর দিকে যেতে বলা হয়।
এ সময় বিমানটি বিধ্বস্তের পুরো ভিডিও কাছ অবস্থিত কেনেডি সেন্টার থেকে একটি ওয়েবক্যামে ধারণ করা হয়। এতে বিমান ও হেলিকপ্টারের মধ্যে প্রচন্ড মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে মধ্য আকাশে আলোকচ্ছটার সৃষ্টি হয়।
আর ঘটনার পরপরই এটিসিকে রেডিওতে বলতে শোনা যায় যে, ‘ আমি মাত্র একটি প্রচন্ড ফায়ার বল দেখলাম এবং সবকিছু শেষ হয়ে গেল। নদীতে পড়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আর কিছু আমি দেখিনি।
উদ্ধার অভিযান
দূর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহতদের স্বজনেরা নদীর পাড়ে ভিড় জমান। এ সময় তারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চায়।
এক মার্কিন বৃদ্ধা এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষকে বলেন, ‘আমি জানি না সে বেঁচে আছে কিনা।’ এরপরেই ওই বৃদ্ধ মহিলা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
পরে ওয়াশিংটন ডিসির ফায়ার বিভাগের প্রধান জন ডনলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান যে ৩০০ কর্মী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি বলেন, উদ্ধার কাজটি বেশ জটিল। প্রবল বাতাসের কারণে উদ্ধার কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি আসলেই উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসময় ডজনখানেক পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধার সরঞ্জাম প্রস্যুত রাখা হয়। নদীর কাছে অবস্থিত রিগ্যান এয়ারপোর্টের টারমাক থেকে চালানো হয় উদ্ধার তৎপরতা। একইসঙ্গে বেশ কিছু নৌকাযোগেও উদ্ধার কাজ চালানো হয়।
পরে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সিইও পটার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ অব্যাহত থাকবে।
এর আগে ১৯৮২ সালে এয়ার ফ্লোরিডা ফ্লাইটের একটি বিমান ৯০ জন যাত্রী নিয়ে এই পটমাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়েছিল। সেসময় ৭০ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু নিহত হন। বাকিরা প্রাণে বেঁচে যান।
সবশেষ ২০০৯ সালে ৪৯ জন যাত্রী নিয়ে কোগান এয়ার ফ্লাইটের একটি বিমান নিউইয়র্কে বিধ্বস্ত হয়। সে সময় মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন।
সূত্র: রয়টার্স