যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার মসনদে বসেই একের পর এক চমক দেখাতে শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের ফেডারেল অনুদান এবং ঋণ স্থগিতের নির্দেশ দিয়ে সোমবার এক মেমো জারি করেন। মেমোতে বলা হয়, ফেডারেল অনুদানে সব ধরণের সংস্থার অর্থায়ন, ঋণ কার্যক্রম এবং অনুদান কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেটের অ্যাক্টিং ডিরেক্টর ম্যাথিউ ভিথ সাক্ষরিত এক মেমোতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
পরে প্রশাসনের সব এক্সিকিউটিভ ডিপার্টমেন্ট ও এজেন্সির প্রধানদের এই মেমো পাঠানোর পাশপাশি মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল পাঁচটা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলেও জানানো হয়।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের ঋণ ও অনুদান স্থগিতের সিদ্ধান্ত আটকে দিয়েছে ডিসট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার ফেডারেল আদালত। মঙ্গলবার ডিসট্রিক্ট জাজ লরেন এল আলিখান এই আদেশ দেন। অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্তের আগে, দেশের অন্তত ২২টি স্টেইট এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া, এই সিদ্ধন্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়। স্টেইটগুলোর অ্যাটর্নি জেনারেলদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট নিজের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল অর্থায়ন সাময়িক বন্ধ করা সংক্রান্ত নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে আদালত। মঙ্গলবার বিকালে নির্দেশটি কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষন আগে ডিসট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার ফেডারেল বিচারক লরেন এল আলিখান আদেশ দেন। ফেব্রুয়ারি ৩ তারিখ, বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে।
এর আগে মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে, ফেডারেল সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দেন, দেশের প্রায় দুই ডজন স্টেইটের অ্যাটর্নি জেনারেল।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের জারিকৃত মেমোতে বলা হয়েছিল, গত বছর এই ধরণের ফেডারেল সহায়তার পেছনে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করা হয়। তবে যে খাতে এই ফেডারেল অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেগুলো কতটা যুক্তিযুক্ত তা নির্ধারণে পর্যালোচনার জন্যই আপাতত স্থগিতের এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
অবশ্য প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া, বিপজ্জনক, বেআইনি এবং অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছেন, নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশা জেইমস।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের বহু মিলিয়ন মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
এবিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টো বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশজুড়ে ফেডারেল অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
তিনি মনে করেন, দেশের মানুষের কল্যাণে, এই আদেশ কার্যকর হওয়া বন্ধে, তাদের সম্ভাব্য সব ধরণের চেষ্টা করা উচিৎ।
তিনি এটিও স্পষ্ট করে জানান যে ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধের এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের হাতে নেই।
অন্যদিকে সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সিডিসি আফ্রিকার ডায়রেক্টির জেনারেল যন কাসেয়া বলেন, ‘সহায়তা বন্ধ করে ট্রাম্প প্রশাসন সারা বিশ্বকে হুমকিতে ফেলেছে।’
এই আর্থিক সহায়তার একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়। যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
এছাড়াও, স্থগিত করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট’স ইমারজেন্সি প্ল্যান ফর এইডস রিলিফ, পিইপিএফএআর। এই তহবিলের কার্যক্রমের ফলে, বিশ্বের ৫০ দেশে প্রায় ২৬ মিলিয়ন মানুষকে এইডস আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
তহবিলের বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বের ৫৫টি দেশে এইডস আক্রান্ত ২০.৬ মিলিয়ন মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে এই তহবিলের অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে।
তবে কংগ্রেসের অনুমোদন করা এসব তহবিল প্রেসিডেন্ট স্থগিত করতে পারেন কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক কংগ্রেসম্যান চার্লি ডেন্ট জানান, তার কাছে এর কোন উত্তর নেই। তবে তিনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্তগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে ইলিনয়ের অ্যাটর্নি জেনারেল কওমি রাউল বলেন, ট্রাম্পের এই অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের নিরাপত্তা, উন্নতি এবং জীবনের মান ধ্বংস করে দেবে।
তিনি দাবি করেন, অর্থায়ন স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যানড্রিয়া ক্যাম্পবেল জানান, তারা বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল সহায়তা পান। তবে সোমবার বিতর্কিত মেমোটি জারির পর, স্টেইট কর্তৃপক্ষ মেডিকেইডের জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলার তোলার চেষ্টা করলেও এখনও পর্যন্ত সেই অর্থ হাতে এসে পৌঁছায়নি।
নিউ জার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাট প্ল্যাটকিন, স্টেইট ও দেশের মানুষকে প্রেসিডেন্টের যেকোনো অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রস্তুত থাকার কথা জানান।
এদিকে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে, কানেটিকাটের অ্যাটর্নি জেনারেলদের উইলিয়াম টং অন্যান্য স্টেইটের সাথে, প্রেসিডেন্টের এই অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন।
এছাড়া মিশিগানের অ্যাটর্নি জেনারেল ডেনা ন্যাসেলও আইনি পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, বিশ্লেষক ফিল ম্যাটিংলি ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে বুনো আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারেই এই ধরণের পদক্ষেপের আভাস দিয়েছিলেন এবং তিনি এখন সেটিই করেছেন।
ম্যাটিংলি আরও জানান, ১৯৭৪ সালে একটি আইন পাশের মধ্যদিয়ে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে কংগ্রেস অনুমোদিত তহবিলের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।
তিনি বলেন, ‘এই আইনের দিক থেকে বিবেচনা করলে, প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অসাংবিধানিক।’