সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল মূলত একাধারে কবি ও সাংবাদিক হলেও শিল্প-সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করছেন। তাঁর কবিতায় গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে নগরায়ন, নাগরিক জীবন, জীবনের জটিলতা, প্রেম, পরবাস, পরাবাস্তব প্রভৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। কানাডা প্রবাসী কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
বর্তমান বাংলা কবিতার মূলধারাকে তিনি শাণিত করছেন, বাঁক ও বিবর্তণে ভূমিকা রাখছেন। সব্যসাচী দুলাল সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার জন্য তিনি দেশ-বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছেন।
দুলাল ছাত্রাবস্থায় দৈনিক ইত্তেফাকের মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতার জীবন শুরু করেন। ১৯৮০সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান এবং ১৯৯৬-এ খালেদা জিয়ার শাসনামলে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। তারপর স্বাধীনভাবে লেখালেখি, সম্পাদনা ও প্রকাশনার কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি।
প্রবাসী বাঙালিদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন নিউজ এজেন্সি ‘স্বরব্যঞ্জন’, সেই সঙ্গে ‘পাঠশালা’র প্রকাশনা। দীর্ঘ দিন প্রবাসের পত্র-পত্রিকায় যুক্ত ছিলেন। টরেন্টো থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বাংলা রিপোর্টে প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের কানাডাস্থ বিশেষ প্রতিনিধি এবং সিবিএন ২৪’এর উপদেষ্টা।
তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। বিটিভির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘দৃষ্টি ও সৃষ্টি’র উপস্থাপক। তাঁর লেখা বেশকিছু গান ও নাটক বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত নাটকসমূহ, সাযযাদ আমিনের কথা, জাকির, সাদিকের জীবন ও সাহিত্য, বৃক্ষ বন্দনা, মুহম্মদ আলির চিঠি, ভালোবাসি ভালোবাসি, ওডারল্যান্ড, শাখা ও শেকড়, বনসাই, বৈশাখী ইত্যাদি। ‘ও ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’, ‘এ দেশ আমার মায়ের আরেক নাম’, ‘ঐ পতাকায় তাকিয়ে দেখি আমার মায়ের শ্যামলা মুখ’…সহ বেশ ক’টি জনপ্রিয় গানের রচয়িতা। বর্তমানে ‘কানাডায় ১৯৭১’ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। বর্তমানে তিনি সপরিবারে কানাডায় বসবাস করছেন।
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, জন্ম: ৩০ মে ১৯৫৮, শেরপুর। স্ত্রী: অপি মাহমুদ। দুই কন্যা সন্তান অনাদি নিমগ্ন ও অর্জিতা। পিতা, আলহাজ্ব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক, মাতা: সারা শহীদুল্লাহ। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল মূলত কবি হলেও শিল্প-সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করছেন। তাঁর কবিতায় গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে নগরায়ন, নাগরিক জীবন, জীবনের জটিলতা, প্রেম, পরবাস, পরাবাস্তব প্রভৃতি প্রতিফলিত হয়। বর্তমান বাংলা কবিতার মূলধারাকে তিনি শাণিত করছেন, বাঁক ও বিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন। কবিতায় যুক্ত করছেন নতুন টার্ম, নতুন ফর্ম। তাঁর ‘তিন মিনিটের কবিতা’ গ্রন্থটি তার উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি গদ্যের মতো পদ্য নিয়েও গবেষণা করেন। সেজন্য কবিতার বিষয় নিয়ে চিন্তার গভীরে প্রবেশ করেন। মানুষের মনোজগতের অন্তর্নিহিত খনিজ তুলে আনেন ডুবুরির মতো। ফলে দুলালের কবিতা হয়ে ওঠে ব্যতিক্রমধর্মী তথা স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে প্রবাসযাপন করলেও এক মুহূর্তের জন্যেও তিনি শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। বরং প্রবাস জীবনের নানা অনুষঙ্গ তাঁর কবিতাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। কখনো কখনো স্বদেশ ও বিদেশের নানা বিষয়আশয় দ্রবীভূত হয়েছে তাঁর কবিতায়; বলা যেতে পারে, তা এক ধরনের চিন্তার অনুবাদ। ছাত্রাবস্থায় দৈনিক ইত্তেফাকের মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতার জীবন শুরু। পরে দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৮০ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান। এক সময়ের জনপ্রিয় বিটিভির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘দৃষ্টি ও সৃষ্টি’র উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রবাসী বাঙালিদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন নিউজ এজেন্সি ‘স্বরব্যঞ্জন’, সেই সাথে ‘পাঠশালা’র প্রকাশনা। বর্তমানে তিনি সপরিবারে কানাডায় বসবাস করছেন ।দৈনিক ইত্তেফাকের কানাডাস্থ বিশেষ প্রতিনিধি এবং সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের উপদেষ্টা সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বরত আছেন এবং ১৯৭১’ নিয়ে গবেষণা করছেন।
কবি প্রাপ্তি ও পুরষ্কার
সূচিপত্র সাহিত্যপত্রের জন্য তিনবার মুক্তধারা একুশে পুরস্কার ১৯৮৭, ১৯৮৮ এবং ১৯৯২; শিল্প সাহিত্যে শেখ মুজিব গ্রন্থের জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পুরস্কার ১৯৯৭, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পদক ১৯৯৬, জাপান থেকে বিবেক সাহিত্য পুরষ্কার ২০০৫, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাব্যশ্রী খেতাব ১৯৭৭ এবং মাইকেল মধুসূদন পদক ২০০৫ সালে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক ২০১৩ সালে এবং আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৮। আন্তর্জাতিক রূপসী বাংলা পুরস্কার ২০১৮, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম বঙ্গ। সাহিত্য দিগন্ত সন্মাণনা ২০১৯, ঢাকা। প্রবাসে সম্মান ও সংবর্ধনা। ইংরেজি, জাপানি, ডয়েচ, ফ্রান্স, উর্দু, সুইডিশ, হিন্দি ভাষায় তাঁর কবিতা অনুদিত হয়েছে/ ভারত-বাংলাদেশের শতাধিক সংকলনে কবিতা-ছড়া-প্রবন্ধ গ্রন্থিত।
কবির প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৬০টি । কাব্যগ্রন্থ: তৃষ্ণার্ত জলপরী, তবু কেউ কারো নই (নাসিমা সুলতানের সাথে যৌথ), অপেক্ষায় আছি প্রতীক্ষায় থেকো, ফেব্রুয়ারি, শহরের শেষ বাড়ি,, ঘাতকেরহাতে সংবিধান, একি কাণ্ড পাতা নেই, দ্রবীভূত গদ্যপদ্য, ঐক্যের বিপক্ষে একা, ফেব্রুয়ারি ২০০০, ম্যাগনাম ওপাস, মুক্তিযুদ্ধের পঙক্তিমালা, এলোমেলো মেঘেরমন, নির্জনে কেনো এতো কোলাহল, পরের জায়গা পরের জমি, নিদ্রার ভেতর জেগে থাকা, ঘৃণিত গৌরব, কবিতাসমগ্র,ফেব্রুয়ারি, নীড়ে নিরুদ্দেশে, সাতে নেই, পাঁচে আছি, প্রেম বিরহের কবিতা, (শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সাথে এক বক্সে) রবি ঠাকুরের প্রাইভেসি, পাখিদের গ্রামে আজ একটি গাছে সাথে সাক্ষাৎ করার কথা, ফেরোমনের গন্দে নেশাগ্রস্থ প্রজাপতি, তোমার বাড়ি কত দূর, প্রেমের আগে বিরহে পড়েছি, সঙ্গমের ভঙ্গিগুলো, তিন মিনিটের কবিতা, আমার সঙ্গে শেখ মুজিবের দেখা হবে আজ।
গবেষণা/প্রবন্ধ
সাহিত্যের শুভ্র কাফনে শেখ মুজিব, ১৯৯৩ অনিন্দ প্রকাশ। শিল্প সাহিত্যে শেখ মুজিব, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ: মুজিব হত্যা মামলা। নাটক : আজ আমাদের ছুটি, জাদুকরের উদ্দেশ্যে যাত্রা,। গল্প : তুমি, যাদুকর, কথা, কয়ড়া গ্রামে বুনো হাতি, ভূতের পাসওয়ার্ড, । রেসকোর্সের অশ্বারোহী। উপন্যাস: বীর বিচ্ছু, যুদ্ধশিশুর জীবনযুদ্ধ, গাছখুন।স্মৃতিকথা: *কাছের মানুষ দূরের মানুষ, দূরের মানুষ কাছের মানুষ, । ছড়া একাত্তরের দত্যি, কবি ঠাকুর রবি ঠাকুর, টাকডুমা ডুম ডুম, পড়ার বই ছড়ার বই, এক যে ছিলো শেখ মুজিব,
সম্পাদনা
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নির্বাচিত কবিতা, ১৯৮৭ নওরোজ কিতাবিস্থান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নির্বাচিত ছড়া, ১৯৯০, * Poems of Liberation World, বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা, স্বরব্যঞ্জন ২০০৫, মুক্তিযুদ্ধ ষয়ক নির্বাচিত কবিতা (বাংলাদেশ, ভারত এবং ভিবিন্ন ভাষায়), কথাশিল্পীদের কবিতা, বঙ্গবন্ধুঃ ১০০ কবির ১০০ কবিরা, স্বরব্যঞ্জন ২০১৯, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ১০০ ছড়া, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত নির্বাচিত গল্প। অন্যান্য: কবিতা সমগ্র ১ অনন্যা ২০০৯। বঙ্গবন্ধু সমগ্র, শিশু কিশোর সমগ্র, ২০২০।
সত্তরের দশকে দৈনিক ও সাপ্তাহিকপত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবনের সূত্রপাত। ১৯৮০-তে সরকারি চাকুরিতে যোগদান। ১৯৯৬ সালে বাধ্যতামূলক অবসর। অতঃপর পুরোদস্তুর লেখালেখিতে মনোনিবেশ। প্রবাসী বাঙালিদের জন্য নিউজ এজেন্সি ‘স্বরব্যঞ্জন’-এর কর্ণধার। প্রবাস থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পত্রিকার সাথে সংযুক্ত। জড়িত আছেন বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে।