১
আমি প্রতিবছর বইমেলা থেকে প্রচুর বই কিনি। আমার লেখক বন্ধুদের ভাল বইগুলো কিনি। যাদের চিনিনা তাদের বইও কিনি। ৪০ বছর ধরেই এমনটা হচ্ছে। বই কেনা আমার অভ্যাস। আমার ছেলে মেয়েও তাই। বিদেশে চলে যাওয়ার পরও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। সারা বছর দেশে থাকি না বলে বইমেলা থেকেই কেনা হয়। বেশিরভাগ বই প্রকাশিত হয় মেলাকে কেন্দ্র করে। যদিও সারা বছর বই প্রকাশিত হওয়া উচিত। শত শত প্রকাশনী হাজার হাজার বই প্রকাশ করে প্রতিবছর। বিদেশে যারা থাকেন তাদেরও অনেক বই প্রকাশিত হচ্ছে। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অনেক লেখক এই সময় দেশে ছুটে আসেন,বইমেলার টানে আসেন। এতো এতো বইয়ের মধ্যে ভাল বই যেমন আছে অখ্যাদ্যও আছে। নতুনদের মধ্যে অনেকে চমৎকার লিখছেন কিন্তু প্রচারের অভাবে পাঠকের কাছে ঠিকঠাকমতো পৌঁছাতে পারছেন না। আবার এতো বইয়ের ভীড়ে ভাল বই নিৰ্বাচন করা সত্যি কঠিন। পাঠকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তারা ঘুৱে ফিরে একই লেখকের বই খোঁজেন। যারা প্রচারনার পাদপ্রদীপের আলোয় থাকেন তাদের বইয়ের খবর মানুষ বেশি জানে। যারা মিডিয়ার লোক বা সেলিব্রেটি লেখকের তকমা পেয়েছেন টেলিভিশনের ক্যামেরা তাদের পিছনে ঘুর ঘুর করে। সাংবাদিকরা কাগজ কলম নিয়ে তাদের খুঁজে বেড়ায়। নতুনদের মধ্যে ভাল কারা লিখছেন বা ভাল বই কোনগুলো সেগুলো খুঁজে দেখার সময় তাদের নেই, সেই চেষ্টাও নেই। আশির দশকে আমৱা যখন বিচিত্রায় বইয়ের রিপোৰ্ট কৱতাম তখন ভাল বইয়ের তালিকা করার একটা চেষ্টা ছিল। পাঠকরা সেই তালিকা ধরে বই কিনতেন। এখন হচ্ছে পরস্পরের পিঠ চুলকানোর যুগ। সিন্ডিকেটের যুগ। আমি তোমার প্রশংসা করে পোষ্ট দেবো তুমি আমার।
২
যুগটাই হচ্ছে প্রচারের। নানাভাবে জানান দিতে হচ্ছে আমি একজন লেখক। আমার বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার বই কিনুন। টেলিভিশনের বই কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলো বা পত্রিকার প্রতিদিনের বইয়ের সংবাদে চেনা মুখদের প্রচারনাই বেশি থাকে। এখানেও বিরাট সিন্ডিকেট। সোশ্যাল মিডিয়া সবচেয়ে বড় প্রচারের জায়গা। যারা টেলিভিশন বা পত্রিকায় সুযোগ পাননা তারা সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় নেন। অনেক লেখকের বই লাইন দিয়ে কিনছেন তার ফলোয়াররা। এক দুই বছর পর সেই লেখকের আর খবর থাকে না। সাহিত্য জগতটাও এক অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার দিকে চলে গেছে। লেখকরাও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। দ্রুত খ্যাতির আশায় অনেকে যা ইচ্ছা তাই করছেন। নিৰ্মল সাহিত্য চৰ্চাৱ পরিবেশটা আর নেই। তবে সবাই যে এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন এমন না। যারা প্রকৃত সাহিত্য করেন তারা খ্যাতি বা পুরষ্কারের আশায় বসে থাকেন না। প্রচারনা নিয়েও ভাবেন না। টেলিভিশনের ক্যামেরা বা সংবাদপত্রের তোয়াক্কা করেন না।
৩
এটা ঠিক যে চাঁদ যখন আকাশে উঠে সবাই দেখতে পায়। তার স্নিগ্ধ আলো বিমোহিত করে। ভাল লেখা পাঠক ঠিকই খুঁজে নেন। কাউকে বলতে হবে না আমার বইটা কিনুন। কাউকে বিব্রত করতে হবে না। অনুরোধে বা খুশী করার জন্য বই কিনে অনেকেই ফেলে রাখেন। ছুঁয়েও দেখেন না কি লিখেছেন। অনেকে আবার অলৌকিকভাবে সবকিছু অৰ্জন করে নেন। পুরষ্কার খ্যাতি সব। এমন সৌভাগ্যবান বেশি নাই। সবাই সব পায় না। তবে মানুষ যে লিখতে চায়, অন্য কিছু না হয়ে লেখক হতে চায় এটাও কম নয়। মানুষ যে বই পড়তে ভালবাসে, মেলায় ছুটে আসেন এরচেয়ে সুন্দর আর কিছু নাই। বই কিনুন বই উপহার দিন।
ঢাকা ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪