আমাদের সামাজিক জীবনের মত প্রতিবেশি অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ তবে স্বর্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে প্রতিবেশি রাষ্ট্র তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই গুরুত্বটা যদি একপেশে হয়ে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশি বিষয়টি টের পেয়ে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিবেচনায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়, তাহলে তা মূর্খতার পর্যায়ে পড়ে এবং এই মূর্খতার জন্য অনেক ত্যাগের প্রয়োজন হয়।
তবে যাই হোক, চলুন টাইটেলে ফিরে যাই। ইউরোপ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ অবশ্যই। প্রথমে আসি বাণিজ্য নিয়ে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অর্জনের দুটি পথ। একটি রপ্তানি অপরটি রেমিটেন্স।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে শুধুমাত্র ২০১৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বমোট ৩২ বিলিয়ন ইউরো রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ ২৮) এর নিকট ১৬.৩ বিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ মোট রপ্তানির অর্ধেক ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে। অপরদিকে ইইউ থেকে আমদানির পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ইউরো। বাণিজ্যের বৈষম্য থাকলেও, এই বৈষম্য বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।
এই বিপুল পরিমাণ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে প্রায় ১৫ বিলিয়নই তৈরি পোশাক এবং এর সঙ্গে টেক্সটাইল, খাদ্য সামগ্রী, মাছ এবং বিভিন্ন কৃষিপণ্য এবং অন্যান্য হস্ত শিল্পের উৎপাদিত পণ্য।
তাছাড়া ইউরোপ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন ধরনের বড় অঙ্কের অর্থ সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে। শুধু তাই নয়, প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় জিএসপির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকার বজায় রেখেছে, যে কারণেই বাংলাদেশের এত উচ্চ রপ্তানি হার ইউরোপের বাজারে। অপর দিকে ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে পাঠানো রেমিটেন্স হিসাবটা না হয় বাদই দিলাম। সুতরাং পাঠক আমার সঙ্গে একমত হতেই পারেন, ইউরোপ বাংলাদেশের জন্য এক প্রকার আশীর্বাদ বৈকি।
চলুন এবার একটু নজর দিই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের দিকে। ইতিহাস-ঐতিহ্য নানা কারণে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিটি দেশের সম্পর্ক রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়, যা আমাদের এশিয়ান সাবকন্টিনেন্টে নজর দিলে সহজে অনুমেয় হবে। যাইহোক ভারত আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র এবং স্বাধীনতা থেকেই বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে।
তবে যদি একটু বাণিজ্য নজর দিই, তাহলে দেখা যায় ২০১৯ সালে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাৎসরিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশে ৮,৯৩৩ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে মাত্র ১,০৪৩ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ পণ্য।
বাণিজ্য বৈষম্য হিসাব করলে বাংলাদেশ ঋণাত্মক ৭,৮৯০ মিলিয়ন ডলার বা ৭.৯ বিলিয়ন ডলার এবং প্রতিবছর যে পরিমাণ রেমিটেন্স বাংলাদেশ থেকে ভারত যাচ্ছে অংকের হিসেবে তা প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য বৈষম্য এবং রেমিটেন্স সর্বমোট হিসেব করলে প্রায় ১১.৯ বিলিয়ন ডলার।
যাইহোক আমরা উন্নয়নশীল দেশ কারও না কারও ওপর নির্ভরশীলতা থাকবে। কিন্তু অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে হিসাব করলে বাংলাদেশ ভারতের জন্য একটি বিরাট সুযোগ এবং তাদের একটি বড় বাজার। দুই দিক থেকে পণ্য এবং জনশক্তি।