লেখক ও সাংবাদিক জসিম মল্লিক। দীর্ঘ তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তাঁর অভিজ্ঞতা বিপুল ও বিশাল। আন্তর্জাতিকতায় জসিম মল্লিক তাই ভিন্ন ধারার এক কাহিনীকথক। স্বতন্ত্র, বলিষ্ট, উচ্চমার্গীয়। জসিম মল্লিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। কথাসাহিত্যিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চে আমন্ত্রিত হয়েছেন, বক্তৃতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য উপন্যাস, গল্প, ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা। ভৌগলিক রেখা আর সীমানায় বিশ্বাস করেন না বলেই হয়তো জসিম মানুষকে আশ্চয্যর্ ছুঁতে পারেন।
কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। বরিশাল বিএম কলেজ এবং বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন এবং কলেজ ম্যাগাজিন, স্থানীয় এবং ঢাকার পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে যাত্রা। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যোগদেন। শৈশব থেকেই অনেক লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বড় হয়েছেন এবং বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। সেই সব লড়াই সংগ্রাম আর বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি লিখছেন অনেক গল্প, উপন্যাস, নিবন্ধ এবং স্মৃতিকথা। জীবন, সমাজ আর মানুষের মনোজাগতিক নানা বিষয় ফুটে ওঠেছে তার লেখনীতে। সম্পর্কের সূক্ষণ বিষয়গুলোকে অনুপঙ্খভাে তুলে আনেন তার লেখায়। প্রকৃতি, গ্রাম আর নাগরিক জীবনের টানাপোড়েন তার লেখার প্রধান উপজীব্য।
জসিম মল্লিক বাংলা একাডেমি, জাতীয় প্রেসক্লাব এবং বরিশাল ক্লাবের সদস্য এবং বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে কানাডার টরন্টোতে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। টরন্টো থেকে প্রকাশিত প্রবাসীকন্ঠ, ভোরের আলো এবং নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ প্রতিদিন ও প্রথম আলো পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক। বাংলাদেশের জনপ্রিয় পত্রিকা সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক২০০০এ সাংবাদিকতা করেছেন। টরন্টো বইমেলার অন্যতম আয়োজক সদস্য। এছাড়া একুশে গ্রন্থমেলা, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, কোলকাতা বইমেলায় নিয়মিত যোগ দেন। এ পর্যন্ত ৪০টির মতো গন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
জসিম মল্লিকের জন্ম বরিশাল শহরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু এবং দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক-এ নিয়মিত লিখছেন। ১৯৮৪ সালে শাহাদত চৌধুরী সম্পাদিত তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যোগদান করেন। এরপর সাপ্তাহিক বিচিত্রার আকস্মিক বিলুপ্তির পর ১৯৯৮ সালে মিডিয়া ওয়ার্ল্ড পাবলিকেশন প্রকাশিত সাপ্তাহিক ২০০০-এ যোগ দেন। দীর্ঘ তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তাঁর অভিজ্ঞতা বিপুল ও বিশাল। এই বিশাল অভিজ্ঞতার উপাদান নিয়েই তিনি নির্মাণ করেছেন অসংখ্য গল্প উপন্যাস এবং সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন লেখা। তুলে এনেছেন জীবনের চরম সত্য আর বাস্তবতাকে। তাঁর সপ্রতিভ, ঋজু, সংহত, সংবেদী ভাষা আর বিষয় বৈচিত্র্যের স্বকীয়তা ও নিজস্বতা বরাবরই লক্ষ্যযোগ্য। সাধারণত তিনি সামাজিক এবং সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মানুষের সম্পর্কের যে মনোজাগতিক বিষয় আছে সেটাকে তিনি অনুপুঙ্খভাবে তুলে আনেন তাঁর লেখায়। এছাড়া প্রকৃতি এবং নদী তাঁর লেখার বেশিরভাগ জুড়ে থাকে। ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য ও বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক। পাঠকপ্রিয় এই লেখক বর্তমানে কানাডার নাগরিক এবং দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার কানাডা প্রতিনিধি ও টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ভোরের আলোর নির্বাহী সম্পাদক এবং এনটিভির কানাডা প্রতিনিধি। বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ২০০০ ও আনন্দধারার বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রিকায় লিখে চলেছেন বিরামহীন।
সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত
জসিম মল্লিক। জন্মঃ ১৭মার্চ১৯৬১। জন্মস্থানঃ সাগরদি, বরিশাল। পিতাঃ হাতেম আলী মল্লিক, মাতাঃ হালিমা বেগম, শিক্ষা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী। নেশাঃ ভ্রমণ, প্রিয়ঃ বইপড়া, স্ত্রী জেসমিন, সন্তানঃ, ছেলেঃ অর্ক, মেয়েঃ অরিত্রি, বসবাসঃ বরিশাল, ঢাকা এবং বর্তমানে টরন্টো, কানাডা।
জসিম মল্লিকের উল্লেখযোগ্য বইঃ
উপন্যাস-১. অভিমান, প্রকাশকঃ ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ। ২. একজন মাধবী, প্রকাশকঃ সময়। ৩. পরীর মতো মেয়ে, প্রকাশকঃ কথা প্রকাশ। ৪ প্রকাশক : অনন্যা।
নির্বাচিত উপন্যাস ১,২ ও ৩ -ঃ প্রকাশকঃ রিদম প্রকাশনা সংস্থা। ছোটগল্প-১. জীবন বারে বারে আসে। প্রকাশকঃ অনন্যা। ২. কোনো কথা ছিলনা। নপ্রকাশকঃ সময়। ৩. নির্বাচিত গল্প। প্রকাশকঃ তাম্রলিপি। ৪. ভালবাসার সংকলন। প্রকাশকঃ রিদম প্রকাশনা সংস্থা। নিবন্ধঃ ১. এখানে প্রানের স্রোত। প্রকাশকঃ কথা প্রকাশ। ২. নক্ষত্রের আগুন ভরা রাতে। প্রকাশকঃ অনন্যা, ৩. পৃথিবীর মানুষের ভীড়। প্রকাশকঃ অনন্যা।
স্মৃতিকথাঃ ১. হৃদয়ে প্রেমের দিন। প্রকাশকঃ কথা প্রকাশ। প্রকাশকঃ অনন্যা। ২. শুধু আকাশ জানে। প্রকাশকঃ অনন্যা। ৩. এায়াভরা এই সংসারে। প্রকাশক-অনন্যা। ৪. আমার মা। প্রকাশক-রিদম প্রকাশনা সংস্থা।
বাংলা একাডেমি পরিচালিত ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কাৱ ২০২২’ পেয়েছেন জসিম মল্লিক। জসিম মল্লিক এবং মার্কিন লেখক ক্যারোলিন রাইটকে মনোনিত করা হয়। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।