নিউইয়র্কের বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা। তবে এবার একই শহরে ঊনবাঙাল নামে একটি সাহিত্য ও শিল্প সংগঠন সম্পূর্ণ নতুন করে অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করছে। এই পৃথক আয়োজনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য ও টানাপোড়েন প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও ঊনবাঙালের আয়োজকরা কোনো বিভক্তি হয়নি বলে দাবি করলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা।
জানা গেছে, গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নিউইয়র্কে বাংলা বইমেলার আয়োজন করে আসছে। তবে এ বছর মুক্তধারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাংশ আলাদা হয়ে নতুন মেলা আয়োজন করেছে। ঊনবাঙাল আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আগামী ২১ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ইলহাম একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন তাদের ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা আগামী ২৩ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।
ঊনবাঙালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি, আমাদের লক্ষ্য বিভক্তি নয়, বরং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া। তারা বলছেন, ঢাকার সাথে মিল রাখার জন্যই এই পৃথক আয়োজন। তবে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের বিশ্বজিৎ সাহা দাবি করে বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত কোনো আমন্ত্রণ পাইনি। এই বিভক্তি দুঃখজনক, তবে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনই নিউইয়র্কে বাংলা বইমেলার মূল ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
প্রবাসী লেখক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলছেন, নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটিতে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্ব অনেক বেশি। বইমেলা সেই আবহকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। তবে এবারের দুইটি পৃথক বইমেলা আয়োজনের ফলে পাঠকদের বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। মুক্তধারার বইমেলা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহন করলেও ঊনবাঙালের নতুন আয়োজন কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা সময়ই বলে দেবে।
এদিকে, গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করে ঊনবাঙাল। এতে জানানো হয়, জ্যামাইকার প্রাইভেট স্কুল ইলহাম একাডেমিতে আয়োজিত এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায়। মেলার উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক মনজুর আহমদ। তিন দিনব্যাপী এ মেলা চলবে ২১ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। তিনদিনের এই আয়োজনে মঞ্চে চলবে কবিতা পাঠ, বই নিয়ে আলোচনা, পুঁথিপাঠ, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, চিরায়ত বাংলা গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন।
আয়োজকরা জানান, উনবাঙালের উদ্যোগে আয়োজিত এ বইমেলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রকাশক বা বই ব্যবসায়ীদের বদলে স্টল বরাদ্ধ পাবেন প্রবাসী লেখকরা। যার ফলে পাঠকদের সঙ্গে লেখকদের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে। লেখকের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধি কারো লেখা বই প্রকাশ হলে সে বইও এ মেলায় জায়গা পাবে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল আলম, সদস্য সচিব আহসান হাবিব, লেখক রওশন হক, মানবাধিকার কর্মী ফৌজিয়াসহ একাধিক মেলা কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঊনবাঙালের অন্যতম সংগঠক কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেলার মূল লক্ষ্য বাংলা ভাষার প্রসার ঘটানো এবং পাঠকদের সরাসরি লেখকদের সঙ্গে যুক্ত করা। আমরা চাই, সবাই একসঙ্গে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে আরও উজ্জ্বল করে তুলুক।
এদিকে ২১ থেকে ২৩ বইমেলার সংবাদ সম্মেলন করার সময় মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহাকে রেস্টুরেন্টের নিচ তলায় একটি মিটিং করতে দেখা গেছে।
তবে দুই পক্ষের মধ্যকার এই বিভক্তি শেষ পর্যন্ত সাহিত্যপ্রেমী বাঙালিদের জন্য কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়। এক ছাদের নিচে সব সাহিত্যপ্রেমীদের একত্রিত করার যে প্রয়াস এতদিন ধরে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন চালিয়ে এসেছে, সেটি ভাঙার ফলে নিউইয়র্কের বাংলা বইমেলার ঐতিহ্যে পরিবর্তন আসতে পারে।