শেষ হলো ৪র্থ ওয়াশিংটন ডিসি বইমেলা। গত ২৬ ও ২৭ আগস্ট ভার্জিনিয়ার হলিডে ইন হোটেলের হলরুমে দুইদিন ব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার পনেরো জনের একটি দল বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব, যুক্তরাষ্ট্র এর নেতৃত্বে বইমেলায় যোগ দেয়। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে নিউ ইয়র্ক থেকে কম বেশি পঞ্চাশ জনের মতো লেখক পাঠক প্রকাশক মেলায় যোগ দেন।
ডিসি বই মেলায় বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের অংশ গ্রহণ ছিলো তাৎপর্যপূর্ণ। ক্লাবের অন্যন্য আয়োজনের মধ্যে ‘জনকের কথা ও কবিতা’, তিন আবৃত্তিকারের কন্ঠে দুই ছড়াকারের ছড়ার আসর ‘আমরা ধরাকে ছড়া জ্ঞান করি’, আলোচনা অনুষ্ঠান, ‘বাংলা শিল্পওসংস্কৃতির লালনে ডিসি বইমেলার গুরুত্ব’, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে ডিসি বইমেলার স্বীকৃতি স্বরূপ দৃষ্টি নন্দন বিশালাকার ক্রেস্ট প্রদান ছিল অন্যতম।
জনকের কথা ও কবিতার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মনজুর কাদের। পরিকল্পনায় ছিলেন আসর ও ক্লাবের সভাপতি কবি মিশুক সেলিম, ছড়াকার খালেদ সরফুদ্দীন, কবি আনোয়ার সেলিম ও লেখক আবু সাইদ রতন। প্রধান অতিথি আজীবন মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী ড. নুরুন নবী, বাংলাদেশ থেকে আগত বিশেষ অতিথি মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা কমান্ডার সিরু বাঙালি, মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের অন্যতম প্রসিকিউটার আনিজীবি অমর ইসলাম, নৃত্য সারথী লায়লা হাসান, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্যাহ, প্রধান আলোচক ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, লেখক শাহান আহমেদ, কবি বদিউজ্জামান নাসিম, ডিসি বই মেলার আয়োজক দস্তগীর জাহাঙ্গীর তুঘরীল ও আনোয়ার ইকবাল কচি।
পাঠে অংশ নেন কবি শামস আল মমীন, আবৃত্তি শিল্পী সাবিনা নিরু, পাপড়ি বড়ুয়া, সুমন শামসুদ্দিন, আনোয়ারুল লাভলু, নুপুর চৌধুরী, কবি এবিএম সালেহ উদ্দিন, বেনজীর সিকদার, শাহানা শৈলী, হুমায়ূন কবীর ঢালী প্রমুখ।
ছড়ার আসর ‘আমরা ধরাকে ছড়া জ্ঞান করি’ সাজানো হয়েছে খালেদ সরফুদ্দীন ও মনজুর কাদের এর একগুচ্ছ ছড়া পাঠের মধ্য দিয়ে। ছড়াগুলো পড়েছেন তিন শুদ্ধ আবৃত্তি শিল্পী পাপড়ি বড়ুয়া, সুমন শামসুদ্দিন ও সাবিনা নিরু।
বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ডিসি বই মেলা কর্তৃপক্ষকে সম্মাননা স্মারক অনুষ্ঠানটি ছিলো তুমুল করতালি ও হর্ষোল্লাসে মুখরিত। ড. নুরুন নবী ও সিরু বাঙালীর হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন দস্তগীর জাহাঙ্গীর, ড. নজরুল ইসলাম, রোকেয়া হায়দার, আনোয়ার ইকবাল কচি, নীতু মেহজাবীন, কবিতা দেলোয়ার, নুপুর চৌধুরী ও অন্যরা। ক্লাবের পক্ষ থেকে উপস্হিত ছিলেন খালেদ সরফুদ্দীন, আবু সাইদ রতন, আনোয়ার সেলিম, সাবিনা নিরু, পাপড়ি বড়ুয়া, সুমন শামসুদ্দিন, এবিএম সালেহ উদ্দিন, নাসির সিকদার, আনোয়ারুল লাভলু ও বেনজীর সিকদার। ক্লাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মনজুর কাদের।
বই মেলার অন্যান্য আয়োজন ছিলো ছিমছাম ও পরিকল্পিত। উপস্থাপনা মার্জিত, যথাযথ ও শ্রুতিমধুর। বই পরিচিতি, কবি পরিচিতি, কাব্য পঠন সহ সব আয়োজন ছিলো ছোট ছোট করে ভাগ করা। ফলে সবার কথা ঠিকঠাক শোনা গেছে এবং অনুষ্ঠান ঝুলে যাবার আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় দর্শকদের বিরক্তি উৎপাদনের সুযোগ হয়নি।
শাড়ি গয়না বা খাবার স্টল মেলা প্রাঙ্গনে স্থান দেয়া হয়নি। কেবল বই ও লেখক সংক্রান্ত ছোট ছোট আসর এবং সঙ্গীতানুষ্ঠানই ছিলো মেলার মনেগ্রাহী উপকরণ। কবিতা হায়দারের ‘কবিতার সাথে’ চ্যানেলে প্রায় সকলের কন্ঠই মজুদ করে রাখা হয়েছে।
এছাড়া “কবি সুফিয়া কামাল” হলে অনুষ্ঠিত হয় নাট্য কর্মশালা। নাট্য কর্মশালা পরিচালনা করেন মামুনুর রশিদ ও অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার। এছাড়া দুইদিনে মোট ১০ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনন্য তথ্যচিত্র-ব্লকেড এর প্রদর্শনী। হল ভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্য চিত্র প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বীর প্রতিক সেতারা বেগম এবং রনাংগনের যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার সেতারা বেগম এবং সাংষ্কৃতিক ফ্রন্টের মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য চিত্রটির পরিচালক আরিফ ইউসুফ,সহ-পরিচালক তাসবীর ইমাম স্বাক্ষর। মুক্তিযুদ্ধ এবং তথ্যচিত্রটি নিয়ে আলোচনা করেন সেতারা বেগম, সেতারা বেগম, মযহারুল হক, সরকার কবীর উদ্দিন, লায়লা হাসান প্রমুখ।
দুইদিন ব্যাপী বইমেলায় মোট এগারো পর্বে প্রায় ৪০ জন প্রবাসী কবি-লেখকের বই নিয়ে আলোচনা চলে। আলোচনা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল নানা বিষয়ের বইয়ের দোকান। স্থানীয় প্রকাশকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আসেন অন্বয় প্রকাশনী ও নালন্দা প্রকাশনী।
মনিপুরী নৃত্যশিল্পী তামান্না ইসলামের মনোমুগ্ধকর নৃত্য, সমাপনী বক্তব্য এবং আগামী ৫ম বইমেলার তারিখ ঘোষণা করেন দস্তগীর জাহাঙ্গীর ও ড নজরুল ইসিলাম।
দিনার মনির আদূরে কন্ঠের গান সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তবে নিউ ইয়র্কের বিপা প্রযোজিত অনুষ্ঠান সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিপার সোনার টুকরা শিশু কিশোর শিল্পীদের পরিবেশনা বইমেলার মাইলফলক হয়ে থাকবে।