ফারহান এবং মিমি সদ্য বিবাহিত। দুজনেই কাজের পাশাপাশি মাস্টার্স করছে বাংলাদেশের সুনামধন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। মিমির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো কানাডায় স্থায়ীভাবে চলে যাওয়া। ফারহানও সেটাই চায়। কিন্তু বাংলাদেশের ভালো চাকরিটা ছেড়ে যেতে মাঝে মাঝে মন সায় দেয় না। আর তার ওপরে বাংলাদেশে বাবা-মাকে দেখাশোনা করারও নির্ভরযোগ্য কেউ নেই।
কানাডায় কী ইমিগ্রেশন নিয়ে যাওয়া ভালো হবে? নাকি স্টুডেন্ট ভিসা?
কানাডা গিয়ে ভালো চাকরি মিলবে তো?
নাকি অড-জব করেই কাটিয়ে দিতে হবে?
কানাডায় থাকা-খাওয়ার খরচ কেমন হতে পারে?
কানাডা যাওয়ার কত দিন পর বাবা-মাকে সে নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারবে?
কানাডার ইমিগ্রেশন কী নিজে করা সম্ভব?
নাকি এজেন্সি বা ফেসবুকের কোনো দালালকে দিয়ে করাতে হবে?
ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ফারহানের মনে প্রতিদিন ঘুরপাক খায়। একইসঙ্গে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি কানাডার উন্নত জীবনও হাতছানি দিয়ে ডাকে।
ফারহান আর মিমির মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইমিগ্রেশনকে প্রাধান্য দেওয়াটা জরুরি। কেননা স্টুডেন্ট হয়ে কানাডায় পড়তে যাওয়ার খরচ অনেক। যদিও কানাডায় স্কলারশিপ পেলে সেটা অবশ্যই ভালো। কিন্তু স্কলারশিপ, ফান্ডিং ইত্যাদি পাওয়াটাও সহজ ব্যাপার নয়।
কানাডার ইমিগ্রেশনের কথা চিন্তা করলে কয়েকটি কথা মাথায় রাখতে হবে। এক. কানাডার ইমিগ্রেশন একটি ধৈর্যের পরীক্ষা দুই. সঠিক সময়ে সঠিক কাজগুলো করে ফেলাটা জরুরি তিন. বিভিন্ন এজেন্সি কিংবা দালাল ছাড়াই নিজের ইমিগ্রেশন নিজে করা সম্ভব।
কানাডার ইমিগ্রেশনের জন্য শুরুতে কি করা প্রয়োজন?
প্রথমেই IELTS এ ভালো স্কোর করাটা জরুরি। এরপর রয়েছে এডুকেশনাল ক্রেডেনশিয়াল অ্যাসেসমেন্ট (ECA) করানো, ব্যাংকে নির্ধারিত ফান্ড জমা রাখা, ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স লেটার এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাগজাদি তৈরি করা ইত্যাদি কাজ।
কানাডা গিয়ে ভালো চাকরি মিলবে কী?
কানাডায় গিয়ে ভালো চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন সবার মাঝেই কমবেশি থাকে। সাধারণত ব্যাংকিং, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি সেক্টরে অভিজ্ঞতা সাপেক্ষে দ্রুত চাকরি পাওয়ার আশা থাকে।
তারপরেও বলা যায়, কানাডায় গিয়ে কানাডিয়ান কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়াশোনা শেষ করতে পারলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। কানাডিয়ান পড়াশোনা, অভিজ্ঞতা, রেফারেন্স ইত্যাদি দ্রুত চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
কানাডায় থাকার খরচ কেমন হতে পারে?
বড় শহর যেমন, টরেন্টোতে থাকার খরচ বেশি। টরন্টোতে এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট লিভিংরুম এবং কিচেনসহ এলাকাভেদে প্রতি মাসে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ ডলার।
আর একা থাকলে সেক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৮০০ ডলারের মধ্যে এক রুম, শেয়ার্ড কিচেন এবং ওয়াশরুমসহ পাওয়া সম্ভব। খাবার খরচ জনপ্রতি মাসে ১০০ থেকে ১৫০ ডলার ধরে রাখতে পারেন। বাসায় নিয়মিত রান্না করে খেলে খরচ কমে যাবে। যাতায়াতে এক থেকে ১৫০ ডলার মাসে ধরে রাখতে হবে।
বাবা-মাকে কানাডায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব কী?
অবশ্যই সম্ভব। কানাডায় যাওয়ার পর ভিজিট ভিসা কিংবা সুপার ভিসাতে বাবা-মাকে কানাডায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে হ্যাঁ, সেক্ষেত্রে কেউ কানাডায় যাওয়ার পরপরেই হয়তোবা সেটা করা সম্ভব না হলেও কয়েক বছর পরে বাবা-মাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
বাংলাদেশ থেকে যারা কানাডায় ইমিগ্রেশন নিয়ে যেতে আগ্রহী, তাদের মনে এক ধরনের সংশয় কাজ করে যে, বাংলাদেশের বড় চাকরি কিংবা আরাম-আয়েশ ছেড়ে কানাডার ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং কঠিন জীবনের মুখোমুখি হওয়াটা আসলেই কী ঠিক কাজ হবে?
উত্তরে এতটুকুই শুধু বলা যায় যে, পৃথিবীর অন্যতম শান্তির দেশ কানাডায় যারা পাড়ি জমিয়েছেন, শুরুতে হয়তোবা অনেক কষ্টের সম্মুখীন তারা হয়েছেন, কিন্তু কালক্রমে এই দেশান্তরী মানুষজন কানাডাতেই তাদের স্থায়ী ঠিকানা করে নিয়েছেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও একটি সুন্দর জীবন উপহার দিয়েছেন।
কানাডার ইমিগ্রেশন নিয়ে অলাভজনক কার্যক্রম ‘ইমিগ্রেশন আ্যন্ড সেটেলমেন্ট’ (http://immigrationandsettlement.org) এর ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক গ্রুপে (https://www.facebook.com/groups/immigrationandsettlement) বিনামূল্যে সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব।