ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সরকার এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নতুন পথ খুঁজে নিতে এই নির্বাচন হবে। একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের এই অভিযাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে অনুষ্ঠিত শুনানিতে এ কথাগুলো বলেন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ সেপ্টেম্বর তাঁকে বাংলাদেশে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত মনোনীত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে কাউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মনোনয়ন অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠানো হয়। সিনেটে শুনানি হয়। শুনানি শেষে সিনেট অনুমোদন দিলে নতুন রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনেট কমিটিতে শুনানিতে অংশ নেন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন।
সেখানে বক্তব্যের শুরুতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দেন। তাঁর প্রতি আস্থা রাখার জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিরওর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ঢাকায় পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে সিনেটের অনুমোদন পেলে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক নীতি ও স্বার্থ এগিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে অতীতে দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, বড় প্রতিবেশীদের ছায়ায় থাকে বলে বাংলাদেশ প্রায়ই যথেষ্ট মনোযোগ পায় না। আগের দফায় পদায়নসহ মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে তাঁর বাংলাদেশ বিষয়ে দুই দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের গুরুত্ব এবং দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ভালো বোঝেন তিনি। কৌশলগত অবস্থান বাংলাদেশকে একটি উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তুলেছে।
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে। ২০২৪ সালের আগষ্টে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে একটি সরকারের পতন হয়েছে, যারা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশের জনগণ আগামী বছরের শুরুর দিকে ভোট দেবেন।
নতুন সরকার আর নতুন পথ বেছে নেওয়ার জন্য এটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। বাংলাদেশকে একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরবর্তী সরকারের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকা দূতাবাসের টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমি অপেক্ষায় রয়েছি।’
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকবিষয়ক কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর মতে, এশিয়ার অন্যতম নতুন ‘টাইগার’ হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখিয়েছে। তিনি বলেন, বিশাল চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের পর বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার সন্নিকটে, যা বাংলাদেশিদের সহনশীলতা ও দৃঢ়তার সত্যিকারের নিদর্শন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে সিনেটের অনুমোদন পেলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার সুযোগ সম্প্রসারণ, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা ও বাণিজ্যঘাটতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করবেন।
মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, গত আট বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করছে, যারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসেছে। ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র অসাধারণ কাজ করেছে।
নিজে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য এই কাজ নিজ চোখে দেখেছি এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল যোগানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচেষ্টা দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই নয়। আমাদের ওপর চাপ কমাতে আরও দেশের অর্থনৈতিক সহায়তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সহায়তা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য জাতিসংঘ ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে একই ধরনের কাজ না হয় এবং আরও কার্যকরভাবে সহায়তা পৌঁছানো যায়।’
রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন হলে এই সংকটের একটি টেকসই ও কার্যকর সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।