দীর্ঘ আট বছর পর বাড়তে চলেছে এইচ-১বি, এল-১, ইবি-৫ সহ যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ভিসার ফি। গত ৩১ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে একথা ঘোষণা করেছে বাইডেন প্রশাসন।
বুধবার ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) এক ঘোষণায় জানা যায় যে, এইচ-১বি ভিসা এক লাফে ২০৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন এই ফি অবশ্য এখনই কার্যকর হচ্ছে না। এগামী ১ এপ্রিল থেকে এই বর্ধিত ফি কার্যকর হবে।
শেষবার ২০১৬ সালে এই ধরনের নন ইমিগ্র্যান্ট ভিসাগুলির ফি বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এতদিন এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদনের ফি ছিল ৪৬০ মার্কিন ডলার। ১ এপ্রিল থেকে এজন্য গুনতে হবে ৭৮০ ডলার। অন্যদিকে এই ভিসার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১০ডলারের পরিবর্তে ২১৫ মার্কিন ডলার দিতে হবে। এই নিয়ম অবশ্য কার্যকর হবে আগামী বছর থেকে।
অন্য দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মার্কিন কোম্পানিগুলির অন্যতম ভরসা এইচ-১বি ভিসা। প্রতি বছর এই ভিসার মাধ্যমে ভারত ও চীনের মতো দেশগুলি থেকে হাজার হাজার কর্মী নিয়োগ করে সেখানকার প্রযুক্তি সংস্থাগুলি।
মার্কিন কোম্পানিগুলিতে বিদেশি লগ্নিকারী ও তাঁদের পরিবারের জন্য ১৯৯০ সালে ইবি-৫ ভিসা চালু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে লগ্নির পরিমাণ কমপক্ষে ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার। ইবি-৫ ভিসার বর্তমান ফি ৩ হাজার ৬৭৫ মার্কিন ডলার। এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে এর জন্য ১১ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে।
অন্যদিকে বহুজাতিক সংস্থাগুলির কর্মী আদান প্রদানের জন্য তৈরি এল-১ ভিসা। এর সাহায্যে অন্য দেশ থেকে নির্ধারিত সময়ের জন্য কর্মীদের আমেরিকায় অবস্থিত অফিসে পাঠায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এবার থেকে এই ভিসা পেতে ৪৬০ মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ১ হাজার ৩৮৫ টাকা দিতে হবে।
ভিসা ফি বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন কেউ তার স্ত্রী কিংবা স্বামীকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে চাইলে তা ব্যয়বহুল হবে। পাশাপাশি এদেশে অবস্থানকালে দ্বিতীয় ধাপে কেউ স্থায়ী বাসিন্দার (গ্রিন কার্ড) মর্যাদায় যেতে চাইলে উল্লেখযোগ্য হারে ফি গুনতে হবে।
আই-১৩০ ফর্মের মাধ্যমে যারা পারিবারিক পুনর্মিলন বা বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে যেতে চান তাদের ক্ষেত্রে ফি ২৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৭৫ মার্কিন ডলার করা হয়েছে। কোনো মার্কিন নাগরিক কিংবা গ্রিন কার্ডধারীই তার আত্নীয়কে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে ও গ্রিন কার্ড পাইয়ে দিতে এই আবেদন করেন। পরবর্তীতে যদি ওই আত্মীয় স্ট্যাটাস সামঞ্জস্য করতে অর্থাৎ গ্রিন কার্ড পেতে আবেদন করেন তখন তাকে গুনতে হবে ১৪৪০ মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে ভিসা ফি বাড়ানো হয়েছে ১৮ শতাংশ।
এদিকে এইচ-১বি ভিসা পুনর্নবীকরণে জালিয়াতি এড়াতে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াতেও বদল আনা হয়েছে। এর আগে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য একাধিক আবেদন করতে পারতেন। যার ফলে নিয়মের ফাঁক গলে এই ভিসা নিয়ে প্রায়শই জালিয়াতির অভিযোগ উঠত। কিন্তু নতুন নিয়মে এখন থেকে একজন ব্যক্তি একটি আবেদনই করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাসপোর্ট নম্বর মিলিয়ে বাকি আবেদন স্বীকৃত হবে না।
২০২৫ সালের জন্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই নতুন নীতি কার্যকর হবে বলে জানা গিয়েছে। যাদের চাকরি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের ১ অক্টোবরের পরে শুরু হবে, তারা এই নতুন নীতিতে আবেদন করবেন। ভিসার জন্য আবেদন জানানোর প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ২২ মার্চ।
প্রতি বছরই মার্কিন প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন সংস্থাকে ৬৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা দেয়া হয়। পাশাপাশি আরও ২০ হাজার ভিসা দেয়া হয় বেশি ডিগ্রি ধারক কর্মীদের। প্রতিটি ভিসার মেয়াদ তিন বছর এবং তা পরে আরও তিন বছরের জন্য রিনিউ করা যায়। সাম্প্রতিক বছরে সবথেকে বেশি সংখ্যক এইচ১বি ভিসা ব্যবহার করে আমেরিকায় কর্মী নিয়োগ করেছে ইনফোসিস, টিসিএস, অ্যামজন, মেটা, অ্যালফাবেট (গুগল-এর মালিক)।