জাহিদুন্নবী দেওয়ান শামীম যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে সাইন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী জাহিদুন্নবী দেওয়ান শামীম একাধারে চিকিৎসক, বায়োমেডিকেল গবেষক, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক। তিনি কর্মস্থলে ক্যান্সার বায়োলজী ও ইমিউনোলজী নিয়ে গবেষণা করছেন। পাশাপাশি দেশের জাতীয় রাজনীতির ও সমাজে সেবামূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত। সকলের কাছে তিনি জাহিদ দেওয়ান শামীম নামেই পরিচিত।
রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে ২৫ ডিসেম্বর ১৯৬৮ সালে জাহিদুন্নবী দেওয়ান শামীম জন্মগ্রহণ করেন। বাবা এ এফ নুরুন্নবী দেওয়ান আর মা জাহানারা দেওয়ান। বাবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স এবং পেশায় শিক্ষক ছিলেন। মা ছিলেন গৃহিণী। তার ৭ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম।
শিক্ষাজীবন জন্মস্থান রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার জামালপুর গ্রামের জামালপুর প্রাথমিক স্কুলে শুরু। এরপর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশের পর ১৯৮৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৯৫ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ওই বছর এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার পর শিক্ষানবিশ ডাক্তার হিসেবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে হবিগন্জ সদর হাসপাতালে ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসার ছিলেন। ২০০৪ সালের মার্চে জাপানের টোকিও মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল ইউনিভার্সিটি থেকে ক্যান্সার বায়োলজী ও ইমিউনোজীতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করার পর একই ইউনিভার্সিটিতে সাইন্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৭ সালে ক্যান্সার ইমিউনোজীতে এডভান্স গবেষণা করার জন্য যুক্তরাস্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে ৩ বছরের ফেলোসীপ লাভ করেন। ২০১০ সালে ক্যান্সার ইমিউনোজীতে ফেলোসীপ শেষে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন, যুক্তরাস্ট্রে সাইন্টিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
ড. জাহিদ দেওয়ান শামীমের বেশকিছু গবেষণা ও প্রকাশনা রয়েছে। তার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়বন্তুঃ ক্যান্সার বৃদ্ধি ও প্রসারনে নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টর কাপা বি (NF-kappaB) এবং ইমিউন সেলের (Especially T & NK cells) ভূমিকা এবং ক্যান্সারের নতুন চিকিৎসা আবিষ্কার। গবেষণায় প্রাপ্ত ফল তিনি ৩০টির বেশি বিভিন্ন হাই ইমপ্যাক্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশ করেছেন।
মেধাবী বিজ্ঞানী ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম পেয়েছেন নানা পুরস্কার এবং সম্মাননা। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অধ্যায়রত অবস্থায় ১৯৮৮ – ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে মেধাভিত্তিক বৃত্তি পান। ১৯৯৮ – ২০০৪ সাল পর্যন্ত পিএইচডি স্টুডেন্ট হিসেবে জাপান সরকারের মনোবসু বৃত্তি পান। গবেষণা করার জন্য ২০০৪ – ২০০৭ সাল পর্যন্ত জাপান সরকারের জেএসপিএস (JSPS) ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০০৭ সালে ক্যান্সার ইমিউনোজীতে এডভান্স গবেষণা করার জন্য যুক্তরাস্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে ৩ বছরের ফেলোসীপ (NIH-NRSA) লাভ করেন।
পেশায় চিকিৎসক, বায়োমেডিকেল বিজ্ঞানী হলেও তিনি অত্যান্ত সচেতন মানুষ। তিনি দেশের রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ ও চলমানবিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখিও করেন।
ড. জাহিদ দেওয়ান শামীমের রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। ১৯৮৯ সালের সম্মেলনে ছাত্রদল রাজশাহী মেডিকেল কলজ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৯০-এ স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী গনআন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে এজিএস (সহ-সাধারন সম্পাদক) এবং ১৯৯২ সালের সম্মেলনে ছাত্রদল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯২-১৯৯৩ মেয়াদ মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ একাডেমিক কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৩ সালে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৩-১৯৯৪ মেয়াদ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রসংসদের ভিপি (সহসভাপতি) নির্বাচিত হন। ১৯৯৫-১৯৯৬ মেয়াদে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইন্টানি চিকিৎসক পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালের সম্মেলনে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এলুমনাই এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৫ সালে দেওয়ান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সাধ্যমত বাগমারা তথা দেশের মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করে আসছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে সানজিদা আহমেদ লীমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। লীমা পেশায় একজন চিকিৎসক, খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি ২ সন্তানের দুই সন্তানের জনক – ছেলে জাওয়াদ দেওয়ান (জন্ম ২০০৫) এবং মেয়ে জুবারিয়া দেওয়ান (জন্ম ২০১২)।
রাজনীতি ও সমাজসেবা